আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া দূর্বাচারার গ্রামের চরমপন্থী-সন্ত্রাসী লিপ্টন গং কর্তৃক ঘরবাড়ী ও দোকান ভাংচুর, লুটপাট, গুলি বর্ষণ, গুলি ও গুলির খোসা এবং দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার সেই সাথে ১৪ জনকে আটক করেছে ইবি থানা পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে হলে লিপ্টনের পেছনের ইতিহাস সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।
এক সময়ের চরমপন্থী-সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর কবির লিপ্টন দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই কোন এক অদৃশ্য শক্তির বলে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পুলিশ-র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে ক্রসফায়ারের ভয়ে দিশেহারা হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়ে আবার নিজ জেলায় ফিরে এসেই সে আবারও দলকে সংগঠিত করতে শুরু করেছে।
চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করার জন্য দলে নতুন নতুন সদস্য ভিড়িয়েছে লিপ্টন। বর্তমানে তিনি প্রকাশ্যে সরকারী আমলা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, ঠিকাদার, ডাক্তার-প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছ থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজী শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ায় কাজল মাজমাদারের বাড়িতে জাসদ নেতা বাবু, পিটিআই রোডের ঠিকাদার নাসির উদ্দিন, কালিশংকরপুরের ফয়েজ, হাউজিং এলাকার যুবলীগ নেতা জামু ও কোর্ট স্টেশন এলাকায় ঠিকাদার হাবিব হত্যাকান্ডের নেতৃত্বে দিয়ে মুর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয় লিপ্টন।
এই কুখ্যাত চরমপন্থি সন্ত্রাসী বর্তমানে র্যাব-পুলিশের সোর্স পরিচয়ে সমাজ বিরোধী কাজের নেতৃত্ব দিয়ে পুরো কুষ্টিয়া জেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। একটি সুত্র জানায়, শুরুতে কয়েকজন চরমপন্থি ক্যাডারকে ধরিয়ে দিয়ে লিপটন প্রশাসনের আস্থা অর্জন করে।
সে প্রশাসনের একনিষ্ঠ সোর্স হিসেবে নিজেকে তৈরি করে সোর্স টিকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সে বেশ কয়েক বছর ধরে পোড়াদহ কাপড়ের হাট, খাজানগরের চাউলের মোকামসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে চাঁদাবাজী করে যাচ্ছে। লিপটন কয়েকজন ঠিকাদারের কাছে চাঁদাদাবী করেছে।
চাঁদা না দিলে তাদেরকে চরমপন্থী কানেক্টটেড ঠিকাদার সাজিয়ে প্রশাসন দিয়ে ধরিয়ে ক্রস ফায়ারে হত্যার হুমকি দিয়েছে এবং অস্ত্র দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার নজির ও রয়েছে। এ অবস্থায় জেলার মানুষ আতংকে দিন কাটাচ্ছে। ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না তার বিরুদ্ধে।
গত কয়েকমাস ধরে তার নিজ এলাকা কুষ্টিয়া ইবি থানার দূর্বাচারা গ্রামে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে তার সংগঠিত বাহিনী দিয়ে দফায় দফায় বড় ধরনের সংঘর্ষ সৃষ্টি করে চলেছে। তারই ধারাহিকতায় গত ২৬ তারিখ রাত ১০টার সময় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে গুলি বর্ষন,
বোমা ফাটিয়ে ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলাকাটি আতংকিত করতে করতে ছুকুল সর্দ্দার, হামিদুল ইসলাম, শামীম সহ একাধিক ব্যক্তির বাড়ি ও দোকানে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ী ভাংচুর, প্রচুর পরিমানে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুটপাট সহ প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি করে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়।
তার কিছুক্ষন পর ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ আননূর যায়েদ, তার সঙ্গীয় ফোর্সদের নিয়ে আসামী ১। সামছুল আলম (৪০), পিতা-জোয়াদ আলী বিশ্বাস, সাং-শ্যামপুর, ০২। সুজন দাস (২৬), পিতা-সুকুমার কুমার দাস, সাং-দূর্বাচারা (দাসপাড়া),
০৩। মুন্সি একব্বার আলী (৬৩), পিতা-মৃত দলু মুন্সি, সাং-শ্যামপুর, ০৪। মাহমুদ আলী মোল্লা (৪২), পিতা-মৃত ইদবার মোল্লা, সাং-বরইটুপি, ০৫। মোলাম মোল্লা (৫৫), পিতা-মৃত ইউসুফ আলী মোল্লা, সাং-দূর্বাচারা, ০৬। লিয়াকত মন্ডল (৪৫), পিতা-মৃত সাদ আলী মন্ডল, ০৭। মেহেদী হাসান (১৫), পিতা-রশিদ মোল্লা, সাং-দূর্বাচারা,
০৮। মোঃ নিকবার (৫৬), পিতা-মৃত হারান শেখ, সাং-বরইটুপি, সর্ব থানা-ইবি, জেলা-কুষ্টিয়া, ০৯। ইমরান (৩৭), পিতা-মৃত হোসাইন বাবুল, সাং-লক্ষীপুর, ১০। মোঃ মিরাজ মুন্সি (৩৮), পিতা-মৃত শহিরুল মুন্সি, সাং-বরইচারা, ১১। মোঃ রেন্টু মোল্লা (২৮), পিতা-বাহারুল মোল্লা, সাং-বরইচারা,
১২। মোঃ ইসান আলী (২৫), পিতা-জিল্লুর রহমান, ১৩। পলাশ হোসেন (২৩), পিতা-নজরুল ইসলাম, সাং-বরইচারা, ১৪। মোঃ শহিদ হোসেন (৩২), পিতা-মৃত আঃ লতিফ, সাং-বাঁশগ্রাম (পান্টি), সর্ব থানা-কুমারখালী, জেলা-কুষ্টিয়াদের কে গ্রেফতার করে।
এ বিষয়ে ছুকুল সর্দ্দার ও হামিদুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২৭ তারিখ কুষ্টিয়া ইবি থানায় জাহাঙ্গীর কবির লিপ্টনকে ১নং আসামী করে ৪৩ জন সহ অজ্ঞাত আরও ২৫ থেকে ৩০ জনের নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পাকা রাস্তার উপর থেকে ০৩ রাউন্ড পিছনের তাজা গুলি, ০৪ রাউন্ড পিন্ধলের গুলির খোসা ও ০৫ টি লাল কসটেপ দ্বারা মোড়ানো ককটেল জাতীয় বিস্ফোরিত বোমার অংশ বিশেষ পুলিশ উদ্ধার করে।
পুলিশ ০১ নং আসামী জাহাঙ্গীর করিব লিপ্টনের বসত বাড়ি তল্লাসি করে ঘটনার সময় ব্যবহৃত ০২ টি চাইনিজ কুড়াল, ১৩টি ধারালো রামদা, ০২ টি হেমার, ০১ টি ছোট হাতুড়ি, ২৭ টি শড়কি, ০৪ ব্যাগ ইটের খোয়া, ০৪ টি বাঁশের লাঠি, ১০টি বেতের ঢাল উদ্ধার করে। বর্তমানে লিপ্টনসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীরা পালাতক রয়েছে।
তবে এলাকটি এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকার সাধারন জনগন প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে সন্ত্রাসী লিপ্টনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আমরা আতংকে থাকি ঐ সময় তাকেও যদি ক্রসফায়ারে মেরে দিত আমরা ভালা থাকতাম। তাকে চাঁদা দিতে দিতে মোগরা শেষ হইয়া যাইছি।
পুলিশ কি কিছুই জানেনা। আপনারা আমাগোর বাঁচান। পুলিশের কানে আমাদের কথাগুলা বলে দেন। তারা আরো বলেন, লিপ্টন বাহিনীদের কাছে এখনো বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে যা প্রশাসন জানলেও উদ্ধারের কোন তৎপরতা নেই।
এ বিষয়ে ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ আননূর যায়েদ এর মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে র্পথক দুটি মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪ জনকে আটক করেছি অবশিষ্ঠ আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আমি আশা করছি অতি দ্রুত বাকী আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হব।