শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের ভেতর শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বুধবার (১৪ আগস্ট) সকালে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে অধ্যক্ষ নিজেই গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভবিষ্যতে মেডিকেল কলেজের কোনো শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতা খোঁজ মিললে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে মঙ্গলবার মেডিকেল কলেজের সকল শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে অধ্যক্ষ বরাবর ১২ দফা দাবি বাস্তবায়নের আবেদন জানানো হয়। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি থাকা প্রসঙ্গে ৯ম থেকে ১৩ তম ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ৬ দফার সাথে একাত্মতা পোষণ করে ভোটের মাধ্যমে অভিমত দেন। সেখানে ৩৫৫ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৫৪ জন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ মতামত দেন।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ এবং তার অন্তর্গত রিফাত-মিলন ছাত্রাবাস ও রহিমা আফসার ছাত্রীনিবাসে স্থায়ীভাবে সকল প্রকার দলীয় রাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন এবং অন্যান্য) নিষিদ্ধ করতে হবে; এই প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে যথাবিহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার গ্রহণ করতে হবে, তবে ক্যাম্পাসের বাইরে রাজনৈতিক প্রকাশ এবং কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কোনো রূপ বাধা প্রদান করা যাবে না; ইতোপূর্বে ক্যাম্পাসের ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত কোনো মানুষের প্রতি কোনো রকম বিরূপ মনোভাব পোষণ করা হবে না, এই মর্মে নিশ্চয়তা দিতে হবে; ক্যাম্পাস্থিত সকল রাজনৈতিক ক্লাব, সংগঠনে কোনোরূপ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা যাবে না; এই বিষয়ে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে পাসকৃত সিদ্ধান্ত লিগ্যাল নোটিশ আকারে প্রকাশ করতে হবে প্রভৃতিসহ ১২ দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী শাহাদাৎ হোসেন মেহেদী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাদের বেশিরভাগ দাবি মেনে নিয়েছে। আমরা চাই ক্যাম্পাসে যেন আর রাজনীতির কালো থাবা ফিরে না আসে।’
কলেজে একাডেমিকভাবে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ গঠন করা হবে। যা দলীয় ছাত্র রাজনীতির প্রভাব মুক্ত থাকবে বলে জানান এই শিক্ষার্থী।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আকরামুজ্জামান (মিন্টু) বলেন, ‘ছাত্রদের বৈষম্য সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা উঠেছিল,আমরা শিক্ষকরা তাদের এই যুক্তির দাবির বিরুদ্ধে নয়। বরং ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত হলেই ছেলেরা তাদের পড়াশোনা পরিচালনা করতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসের শিক্ষকরাও সম্পূর্ণ রাজনীতি মুক্ত আছেন।’
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে ৯৯.৭% শিক্ষার্থী রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। ১২ দফা দাবি বাস্তবায়নের আবেদনের প্রেক্ষিতে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এছাড়া ওই বৈঠকে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো নোটিশ আকারে প্রকাশ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের ১৪ নেতা-কর্মী স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
১৬ সদস্যের কমিটির মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য সদস্যরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস এবং অলিখিতভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।