বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বাংলাদেশের একটি বেসামরিক রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশ রেলওয়ের ১৯৭৬ সালে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) অধ্যাদেশ জারি হয় যার মাধ্যমে ’ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড’ পরিবর্তিত হয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) নামে কার্যক্রম শুরু করে।
বাংলাদেশের রেল স্টেশনগুলোর নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কাজে সহযোগিতার জন্য প্রতিটা স্টেশনে কিছু সংখ্যক আরএনবি সদস্যদের নিয়োগ দেয়া হয়।
কুষ্টিয়ার পোড়াদহ রেলওয়ে জংশনের আরএনবি সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। রেল স্টেশনে যখন ট্রেন এসে থামে, তখন যাত্রীরা ট্রেন থেকে নামার পরে রেলের কর্তব্যরত টিকিট চেকার তাদের টিকিট চেক করে এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের সহযোগিতা করে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিধানে বলা আছে, যদি কোন ব্যক্তি বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করে, আর যদি সে ধরা পড়ে তাহলে অর্থদণ্ডসহ কারাদণ্ড হতে পারে।
ট্রেন এসে স্টেশনে থামার পরে কর্তব্যরত টিকিট চেকার তাদের টিকিট চেক করে। যদি কারো কাছে টিকিট না থাকে তাহলে তাকে জরিমানা সহ পুনরায় টিকিট দেওয়া হয়। কিন্তু পোড়াদহ রেল স্টেশনে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। পোড়াদহ রেল স্টেশনে নিরাপত্তা কর্মী যারা আছেন, তারা ট্রেন আসার সাথে সাথে যাত্রীদের নিরাপত্তা না দিয়ে, উল্টো চেকারের দায়িত্ব পালন করেন। যারা বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করেছে তাদেরকে জরিমানা সহ পুনরায় টিকিট দেওয়ার পরিবর্তে কিছু টাকা ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই বিষয়ে প্রতিবেদকের হাতে গত ২৫ শে মার্চ সকাল ১১ টার একটি ভিডিও ক্লিপ এসে পৌঁছায়। ভিডিওতে দেখা যায় কুষ্টিয়া পোড়াদহ স্টেশনের আরএনবি সদস্য অখিল, রাসেল এবং আলিফ টিকিট চেকের নামে বিভিন্ন যাত্রীর কাছ থেকে তাদের ভ্রমণ এর টিকিটটি সংগ্রহ করছে, কিছুক্ষণ পর দেখতে পাওয়া যায় বিনা টিকিট ভ্রমনের যাত্রীদের থেকে কোন প্রকার রশিদ না দিয়ে ভাড়া সংগ্রহ করছে। ভিডিওতে আরো দেখা যায় যাত্রীদের সঙ্গে আরএনবি সদস্যগণ টাকা নিয়ে দর কষাকষি করছে।
পরবর্তীতে সাংবাদিকরা আরএনবি সদস্যদের রশিদ বাদে টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তারা জানায় বিনা টিকিটে ভ্রমণ করলে সরকারি যে জরিমানার টাকা হয় তা তা অনেক বেশি, তাই আমরা সামান্য পরিমাণ কিছু টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দিই।
এই টাকা কোথায় যায় তা জানতে চাইলে আর এন বি সদস্য অখিল জানায় যখন যে সহকারী স্টেশন মাস্টার থাকে তখন সে এই টাকাগুলোর হিসাব রাখে।
এই টাকা সরকারি কোষাগারে যায় কিনা জানতে চাইলে অখিল বলে তা সহকারি স্টেশন মাস্টার যানে।
এ বিষয়ে সহকারি স্টেশন মাস্টার শরিফুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বিষয়টা অস্বীকার করে বলেন এই ধরনের কোন টাকার হিসাব আমার কাছে নাই, আর এই ধরনের কোন টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় না।
তিনি আরো বলেন বিনা টিকিটে যাত্রী ধরা পরলে আমরা শুধুমাত্র জরিমানা করে তাদের কাছে থেকে রশিদ দিয়ে জরিমানা সংগ্রহ করি অথবা জিআরপি থানায় বিনা টিকিটে ভ্রমণকারী যাত্রীদের হস্তান্তর করি।
নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের টাকা নেওয়ার ভিডিও আছে জানালে স্টেশন সহকারি মাস্টার জানায়
নিরাপত্তা কর্মীরা যা করছে এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। যদি নিরাপত্তা কর্মীদের এই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ পাই তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।
এ বিষয়ে পোড়াদহ স্টেশন মাস্টার সানোয়ার সাহেবের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ৮ টি ডিপার্টমেন্ট মিলে পুরো একটি স্টেশনের ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করা হয়। আরএনবি সদস্য গুলো যাত্রীদের নিরাপত্তায় কাজ করে, কোন আরএনবি সদস্যের যাত্রীদের কাছে থেকে টাকা নেওয়ার ইখতিয়ার নাই।
পোড়াদহ রেল স্টেশনের মত দেশের বিভিন্ন রেল স্টেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে দেশের রেল খাতে দিনের পর দিন কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।