কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন সততা, কঠোর পরিশ্রম ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মধ্যেই রয়েছে জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি। জীবনে সফল হওয়া ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার আরও অন্যতম উপায় মা-বাবা ও মানুষের দোয়া এবং জবনের শরু থেকে নিজের অব্যাহত কঠোর পরিশ্রম। অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রম ছাড়া জীবনে সফল হওয়ার অন্য কোন সংক্ষিপ্ত উপায় নেই।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর স্কুল এন্ড কলেজে ’সাফল্যের গল্প’ অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। রমানাথপুর স্কুল এন্ড কলেজ কতৃপক্ষ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তিনি শিমু শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু প্রশ্নেরও জবার দেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন এই বর্তমান সময়ে লেখাপড়া করতে বাড়ীর পাশে স্কুল কলেজ সহ তোমরা এখন সকল সুযোগ সুবিধা পাচ্ছ। কিন্তু আমাদের সময় এমনটি ছিলনা, খুব কষ্টকরে গড়াই নদীর চরের গরম বালুর উপর দিয়ে হেঁটে খালি পায়ে স্কুলে যেতে গত। আমাদের সময় শিক্ষকরা অনেক বেশী কঠোর ছিলেন। তারা অনেক বেশী শাসন করতেন। সেই সময়টিআ বোধহয় অনেক ভাল ছিল।
তিনি বলেন তোমাদের মানবিক হতে হবে। তিনে বলেন জীবনের চলার পথে কোন না কোন ভাবে অন্য কারোর সহযোগীতা প্রয়োজন হয়। আবার একইভাবে অন্যকে সহযোগীতা করতে হয়। এই পারস্পরিক মানবিকবোধই জীবনকে এগিয়ে যেতে সহয়তা করে।
তিনি বলেন সকল ধর্মমতে প্রায় একই কথা এসেছে সেটি হলো সব সময় সৃষ্টি কর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে।
তিনি বলেন টাকার মানুষ হওয়া আর প্রকৃত মানুষ হওয়া এক বিষয় না।
তিনি তার জীবনের গল্প তুলে ধরে বলেন আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া মানুষ। জীবনে অনেক সংগ্রাম করে চলতে হয়েছে। তিনি বলেন জীবনে বড় হতে তিনি এসএসসি পরীক্ষার পর ব্যবসাও করেছেন। এটি ছিল পড়ালেখার পাশাপাশি।
তিনি জানান এলাকায় সকলের সহযোগীতায় তিনি খেয়ালী সংসদ নামে একটি লাইব্রেরী গড়ে তুলেছিলেন যেখানে এলাকার মুরোব্বিসহ সকলে বই পড়তেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন মোবাইলের প্রতি আশক্তি কমিয়ে তোমাদের বই পড়তে হবে। তোমরা যদি প্রচন্ড পড়াশোনা না করো তোমরা পিছিয়ে পড়বে। মোবাইলে অনেক ভালো কিছু আছে সে গুলো গ্রহণ করতে হবে। ব্যার্থতা ও সমস্যা সাময়িক পরাজয় জীবনে সফল হতে মানসিক শক্তি যোগায়।
তিনি আরো বলেন তার জীবনে তিনি এ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকা ভুক্ত হওয়ার কিছুদিন পর সরকারী চাকুরী পান। সে সময় তার নানা মরহুম ব্যারিষ্টার আব্দুল হামিদের পরামর্শে তিনি সরকারী চাকুরী না করে আইন প্রাকটিস শুরু করেন। তিনি বলেন চাকরীতে যোগদান করতে না পেরে সে সময় সাময়িক খারাপ লাগলেও সেটা আমার জীবনে মঙ্গল বয়ে আনে। এরপর আমি ডেপুটি এটর্ণী জেনারেল হই তার পর বিচারপতি হই মাঝখানে সাময়িক বিরতী গেলেও ভেঙ্গে পড়িনি। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় পুনরায় বিচারপতি হয়েছি।
তিনি বলেন একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারার উপর জীবনের সফলতা অনেকখানী নির্ভর করে।
রমনাথপুর স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. আমানুর আমানের সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ শেখ মো: আবু তাহের ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রমনাথপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা কামাল।
এসময় কলেজের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও একটি শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া নারী ও শিশু বিচার আদালতের জজ হাবিবুর রহমান, স্পেশাল জেলা জজ আশরাফুল ইসলাম, হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার তোফায়েল হোসেন রুপক, খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ^াস, উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাজমুল হক প্রমুখ।